প্রকাশিত: Thu, Mar 14, 2024 12:36 PM
আপডেট: Tue, Jun 24, 2025 8:08 PM

[১]জলদস্যুদের মেসেজের অপেক্ষায় মালিকপক্ষ [২]কেএসআরএম অফিসে স্বজনদের ভিড়

এম খান: [৩] ভারত মহাসাগরে জলদস্যুর কবলে পড়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর মালিক পক্ষ দস্যুদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও ওদিক থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

[৪] বুধবার বিকালে জাহাজের মালিক এসআর শিপিংয়ের মূল কোম্পানি কবির গ্রুপের মিডিয়া ফোকাল পার্সন মিজানুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা জলদস্যুদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। এখনো কোনো যোগাযোগ স্থাপন হয়নি।’

[৫] তিনি বলেন, “তাদের একটা কৌশল হল জাহাজ ক্যাপচার করার পর তারা সেইফ জোন তৈরি করে। তারপর সেখান থেকে নিজেদের ডিমান্ড জানায়। এখন পর্যন্ত জলদস্যুরা তাদের কোনো ডিমান্ড আমাদের জানায়নি। আমাদের প্রথম প্রায়োরেটি হল নাবিকদের অক্ষত অবস্থায় মুক্ত করা। তারপর জাহাজ অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা।’

[৬] মিজানুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘বুধবার সকালেও নাবিকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। সবাই ভালো আছেন। ’

[৭] মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে মঙ্গলবার ভারত মহাসাগরে জলদস্যুর কবলে পড়ে এমভি আবদুল্লাহ। 

[৮] বিডিনিউজ জানায়, জাহাজের ২৩ নাবিক এখন জলদস্যুদের হাতে জিম্মি।মুক্তিপণ না দিলে জলদস্যুরা তাদের একে একে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে বলেও স্বজনদের জানিয়েছেন নাবিকরা।

[৯] কয়েকটি সংবাদমাধ্যম মুক্তিপণের অর্থের একটি পরিমাণও বলেছে তাদের সংবাদমাধ্যমে। তবে ওই তথ্য ‘ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেছেন কবির গ্রুপের মিডিয়া ফোকাল মিজানুল ইসলাম।

[১০] তিনি বলেন, “আমাদের আগের একটি অভিজ্ঞতা আছে। সে অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আমরা এটাও উদ্ধার করতে পারব বলে আশা করছি।”

[১১] এক দশক আগে একইভাবে জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল বাংলাদেশী পতাকাবাহী জাহাজ অপর একটি জাহাজ ‘এমভি জাহান মনি’। সেই জাহাজটির মালিকও কবির গ্রুপ। নানাভাবে দর কষাকষি করে তিন মাস পর সেই জাহাজ ও জিম্মি নাবিকদের দেশে ফেরানো হয়েছিল সে সময়।

[১২] নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম বুধবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এমভি আবদুল্লাহ উত্তর-পশ্চিমমুখী হয়ে সোমালিয়া উপকূলের দিকে ধীরগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।

[১৩] “গতকাল(মঙ্গলবার) বাংলাদেশ সময় দুপুর নাগাদ এস আর শিপিং এর জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ হাইজ্যাক হয়েছে। সোমালিয়া কোস্ট থেকে প্রায় ৫০০ নটিক্যাল মাইল দূরে। পাইরেসি হওয়ার পরে ইউকেএমটিও এর যে অ্যালার্ম, সেটা এসেছে। গতকাল(মঙ্গলবার) সন্ধ্যা ৭টা ৩৭ মিনিটে জাহাজটি উত্তর-পশ্চিম দিকে যাচ্ছিল। আজ(বুধবার) ভোর ৪টা ২৮ মিনিটে আরো উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয় সোমালিয়া উপকূলের দিকে।”

[১৪] বাংলাদেশ নৌবাহিনী থেকে সর্বশেষ এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের যে অবস্থান জানা গেছে, তা জানিয়ে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের ডিজি বলেন, মঙ্গলবার দুপুর ১টা ৩৩ মিনিটে জাহাজটি উপকূল থেকে ৫৭০ নটিক্যাল মাইল দূরে ছিল। বুধবার সকাল ৬টা ৩৮ মিনিটে উপকূল থেকে ৪৮০ নটিক্যাল মাইল দূরে এসেছে। অর্থাৎ জাহাজটি ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে সোমালিয়ার দিকে।

[১৫] জাগোনিউজ জানায়, এমভি আবদুল্লাহর নাবিক ও ক্রুদের খোঁজে জাহাজটির মালিকপক্ষ কেএসআরএম গ্রুপের চট্টগ্রাম অফিসে ভিড় করছেন স্বজনরা। এসময় কেএসআরএমের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়, যে কোনো মূল্যে নাবিক ও ক্রুদের সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হবে।

[১৬] বুধবার সকালে অনেকেই চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদে কবির গ্রুপের অফিসে আসেন। কবির গ্রুপের অফিসে যারা এসেছেন তাদের কারও বাবা, কারও সন্তান বা স্বজন জলদস্যুদের হাতে জিম্মি রয়েছেন। এসময় তাদের অনেককেই জিম্মি স্বজনদের ছবি প্রদর্শন করতে দেখা যায়।

[১৭] জাগোনিউজ জানায়, ওই জাহাজের প্রধান কর্মকর্তা (চিফ অফিসার) মো. আতিক উল্লাহ খান তার স্ত্রী মিনা আজমিনকে পাঠানো শেষ ভয়েস মেসেজে বলেছেন, ‘এই মেসেজটা সবাইকে পাস করে দিও। আমাদের থেকে মোবাইল নিয়ে নিচ্ছে আর কি। ফাইনাল কথা হচ্ছে যে, এখানে যদি টাকা না দেয়, আমাদেরকে একজন একজন করে মেরে ফেলতে বলছে।’ 

[১৮] এমভি আবদুল্লাহর ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদের পরিবারও আসে কবির গ্রুপের অফিসে। ছেলে আবদুল্লাহর ছবি হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন তার মা পঞ্চাশোর্ধ্ব জোৎস্না বেগম। তিনি বলেন, ‘সর্বশেষ গতকাল(মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় কথা হয়েছে। এরপর থেকে মোবাইল ফোন বন্ধ। আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের সন্তানদের ফেরত চাইতে এসেছি।’